আমরা সবাই জানি একটা পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস, সেখানে থাকে প্রোটন এবং নিউট্রন। পরমাণুর নিউক্লিয়াসে যতগুলো প্রোটন থাকে ঠিক ততগুলো ইলেকট্রন নিউক্লিয়াসকে ঘিরে ঘুরতে থাকে। নিউক্লিয়াসের ব্যাসার্ধ পরমাণুর ব্যাসার্ধ থেকে প্রায় লক্ষ গুণ ছোট। নিউক্লিয়াসের আকার খুবই ছোট হলেও একটা পরমাণুর মূল ভরটি আসলে নিউক্লিয়াসের ভর, তার কারণ ইলেকট্রনের ভর প্রোটন কিংবা নিউট্রনের ভর থেকে 1800 গুণ কম।
প্রোটন পজিটিভ চার্জযুক্ত (ধনাত্মক আধান) তাই শুধু প্রোটন দিয়ে নিউক্লিয়াস তৈরি হতে পারে না, তাহলে প্রবল বিকর্ষণে প্রোটনগুলো ছিটকে যাবে। সেজন্য নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটনের সাথে চার্জহীন নিউট্রনও থাকে এবং নিউট্রন আর প্রোটন মিলে প্রবল শক্তিশালী নিউক্লিয়ার বলের আকর্ষণে নিউক্লিয়াসগুলো স্থিতিশীল থাকতে পারে। সাধারণ হাইড্রোজেনের কেন্দ্রে একটি মাত্র প্রোটন থাকলেও বাড়তি একটি কিংবা দুটি নিউট্রনসহ হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসও রয়েছে।
নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটনের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে সেটাকে স্থিতিশীল রাখার জন্য নিউট্রনের সংখ্যাও বেড়ে যেতে থাকে, কিন্তু তারপরও নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটনের সংখ্যা 82 অতিক্রম করার পর থেকে নিউক্লিয়াসগুলো অস্থিতিশীল হতে শুরু করে। অস্থিতিশীল নিউক্লিয়াসগুলো কোনো এক ধরনের বিকিরণ করে স্থিতিশীল হওয়ার চেষ্টা করে এবং এই প্রক্রিয়াটাকে আমরা বলি তেজস্ক্রিয়তা। নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে যে বিকিরণ বের হয়ে আসে সেটাকে বলে তেজস্ক্রিয় রশ্মি।
নিউক্লিয়াসের ভেতরে প্রোটনের সংখ্যা 82 অতিক্রম করলেই (পারমাণবিক সংখ্যা 82 থেকে বেশি) যে নিউক্লিয়াসগুলো তেজস্ক্রিয় হয়ে থাকে তা নয়, অন্য পরমাণুর নিউক্লিয়াসও তেজস্ক্রিয় হতে পারে। আমরা পরমাণুর শ্রেণিবিন্যাস করেছি তার ইলেকট্রনের সংখ্যা দিয়ে, যেটা প্রোটনের সংখ্যার সমান। একটি মৌলের বাহ্যিক ধর্ম, প্রকৃতি, রাসায়নিক গুণাগুণ সবকিছু নির্ভর করে বাইরের ইলেকট্রনের শ্রেণিবিন্যাসের ওপর। কাজেই কোনো একটি মৌলের পরমাণুতে তার ইলেকট্রন এবং প্রোটনের সংখ্যা সুনির্দিষ্ট হলেও নিউট্রনের সংখ্যা ভিন্ন হতে পারে। ভিন্ন নিউট্রন সংখ্যায় নিউট্রনযুক্ত নিউক্লিয়াসের পরমাণুকে বলা হয় সেই মৌলের আইসোটোপ। কাজেই কোনো একটি মৌলের একটি আইসোটোপ স্থিতিশীল হতে পারে আবার সেই মৌলের অন্য একটি আইসোটোপ অস্থিতিশীল বা তেজস্ক্রিয় হতে পারে। উদাহরণ দেবার জন্য আমরা কার্বন মৌলটির কথা বলতে পারি যার নিউক্লিয়াসে ছয়টি প্রোটন এবং এর তিনটি আইসোটোপ:
: 6টি প্রোটন এবং 6 টি নিউট্রন
: 6টি প্রোটন এবং 7টি নিউট্রন
: 6টি প্রোটন এবং ৪টি নিউট্রন
কার্বনের এই তিনটি আইসোটোপের মাঝে অস্থিতিশীল বা তেজস্ক্রিয়।
1896 সালে হেনরি বেকেরেল (Henri Becquerel) প্রথম ইউরেনিয়াম থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মির অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। পরবর্তীতে আরনেস্ট রাদারফোর্ড (Ernest Rutherford), পিয়ারে কুরি (Pierre Curie), মেরি কুরি (Marie Curie) এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা অন্যান্য মৌলের তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। এটি বাইরের চাপ, তাপ, বৈদ্যুতিক বা চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে কোনোভাবে প্রভাবিত বা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, কাজেই এটি একটি নিউক্লিয় ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়। শুধু তাই নয়, তেজস্ক্রিয়তার কারণে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়ে নিউক্লিয়াসের গঠন পরিবর্তিত হয়ে সেটি ভিন্ন একটি মৌলে রূপান্তরিত হয়ে যায় সেটাও লক্ষ করা হয়েছে।
নিউক্লিয়াস থেকে যে তিনটি প্রধান তেজস্ক্রিয় রশ্মি বের হয় সেগুলো হচ্ছে আলফা, বিটা এবং গামা রশ্মি।
আলফা রশ্মি বা আলফা কণা আসলে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস। একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াসে থাকে দুটো প্রোটন এবং দুটো নিউট্রন, কাজেই এটি একটি চার্জযুক্ত কণা। সে কারণে বিদ্যুৎ এবং চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে এর গতিপথকে প্রভাবিত করা যায়। একটা নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে যখন একটা আলফা কণা বের হয়ে আসে তখন তার শক্তি থাকে কয়েক MeV. কাজেই সেটি যখন বাতাসের ভেতর দিয়ে যায় তখন বাতাসের অণু-পরমাণুর সাথে সংঘর্ষ করে সেগুলোকে তীব্রভাবে আয়নিত করতে পারে। বাতাসে আলফা কণার গতিপথ হয় সরলরেখার মতো, এটা সোজা এগিয়ে যায়। তবে আলফা কণা যেহেতু হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস তাই এটা পদার্থের ভেতর দিয়ে বেশি দূর যেতে পারে না। বাতাসের ভেতর দিয়ে 6 cm যেতে না যেতেই এটা বাতাসের অণু-পরমাণুকে তীব্রভাবে আয়নিত করে তার পুরো শক্তি ক্ষয় করে থেমে যায়। একটা কাগজ দিয়েই আলফা কণাকে থামিয়ে দেওয়া যায়। জিংক সালফাইড পর্দায় এটি প্রতিপ্রভা (phosphorescence) সৃষ্টি করে। আলফা কণা যাত্রাপথে অসংখ্য অণু-পরমাণুকে আয়নিত করে মুক্ত ইলেকট্রন তৈরি করে সেগুলোকে সংগ্রহ করে সহজেই তার উপস্থিতি নির্ণয় করা যায় কিংবা তার শক্তি পরিমাপ করা যায়।
আলফা কণা যেহেতু দুটি প্রোটন এবং দুটি নিউট্রন দিয়ে তৈরি তাই যখন একটি নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে বের হয়ে আসে, তখন সেই নিউক্লিয়াসের পারমাণবিক সংখ্যা কমে দুই ঘর এবং নিউক্লিওন সংখ্যা কমে চার ঘর। যেমন: ইউরেনিয়ামের একটি আইসোটোপ আলফা কণা বিকিরণ করে থোরিয়ামের একটি আইসোটোপে পরিণত হয়।
ইউরেনিয়ামের পারমাণবিক সংখ্যা 92 থোরিয়ামের 90, এখানে উল্লেখ্য, পরমাণুর ইলেকট্রন সংখ্যাটি এখানে ধর্তব্যের মাঝে নয়, তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াসের পরমাণু সহজেই তার চারপাশের পরিবেশে বাড়তি ইলেকট্রন ছেড়ে দিতে পারে, কিংবা গ্রহণ করতে পারে।
বিটা রশ্মি বা বিটা কণা আসলে ইলেকট্রন। এটি নিশ্চয়ই একটি বিস্ময়ের ব্যাপার যে নিউক্লিয়াসের ভেতরে থাকে শুধু প্রোটন এবং নিউট্রন কিন্তু সেখান থেকে ইলেকট্রন কেমন করে বের হয়ে আসে? সেটি ঘটার জন্য নিউক্লিয়াসের ভেতরের একটি নিউট্রনকে প্রোটনে পরিবর্তিত হতে হয়।
অর্থাৎ একটি চার্জহীন নিউট্রন পজিটিভ চার্জযুক্ত প্রোটন এবং নেগেটিভ চার্জযুক্ত ইলেকট্রনে পরিবর্তিত হয়, কাজেই মোট চার্জের পরিমাণ অপরিবর্তিত থাকে। সমীকরণের ডান পাশে দিয়ে পদার্থবিজ্ঞানের জগতের রহস্যময় কণা নিউট্রিনোর প্রতিপদার্থকে (এন্টি-নিউট্রিনো) বোঝানো হয়েছে, এটি চার্জহীন এবং এর ভর খুবই কম।
নিউক্লিয়াসের ভেতরে থেকে যখন আলফা কণা বের হয় সেটা একটি নির্দিষ্ট শক্তি নিয়ে বের হয় কিন্তু বিটা কণার জন্য সেটি সত্যি নয়। বিকিরণের মোট শক্তির কতটুকু নিউট্রিনো নিয়ে নেবে তার ওপর বিটা কণার শক্তি নির্ভর করে।
বিটা কণা যেহেতু ইলেকট্রন তাই তার চার্জ নেগেটিভ (ঋণাত্মক আধান) এবং সে কারণে সেটি ইলেকট্রিক এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্র দিয়ে প্রভাবিত করা যায়। এটি যখন কোনো পদার্থের ভেতর দিয়ে যায় তখন সেই পদার্থের অণু-পরমাণুর সাথে সংঘর্ষের কারণে সেগুলোকে আয়নিত করতে পারে। আলফা কণার হিলিয়াম নিউক্লিয়াসের তুলনায় ইলেকট্রন খুবই ক্ষুদ্র তাই ইলেকট্রনের ভেদনক্ষমতা অনেক বেশি এবং সেটি পদার্থের অনেক ভেতর ঢুকে যেতে পারে। কয়েক মিলিমিটার পুরু অ্যালুমিনিয়ামের পাত দিয়ে একটি সাধারণ বিটা কণাকে থামানো সম্ভব।
বিটা কণার বিকিরণ হলে নিউক্লিয়াসে একটি নিউট্রন কমে গিয়ে একটি প্রোটন বেড়ে যায়, তাই তার নিউক্লিওন সংখ্যা সমান থাকে। কিন্তু যেহেতু পারমাণবিক সংখ্যা প্রোটনের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে তাই নিউক্লিয়াসের পারমাণবিক সংখ্যা বেড়ে ভিন্ন মৌলের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। যেমন তেজস্ক্রিয় বিটা বিকিরণে এ পরিবর্তিত হয়:
(এন্টি-নিউট্রিনো)
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিটা বিকিরণ বলতে আমরা যে শুধু নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে ইলেকট্রনের বিকিরণ বোঝাই তা নয়, ইলেকট্রনের প্রতিপদার্থ পজিট্রনের বিকিরণকেও বিটা বিকিরণ বলে। তার জন্য নিউক্লিয়াসের ভেতরে কোনো একটি প্রোটনকে নিউট্রনে পরিবর্তিত হতে হয়:
(নিউট্রিনো)
এই প্রক্রিয়াতে নিউক্লিয়াসে প্রোটনের সংখ্যা এক কমে যায় বলে তার পারমাণবিক সংখ্যাও এক কমে ভিন্ন মৌলের নিউক্লিয়াসে পরিণত হয়। (এ বিক্রিয়াটি নিউক্লিয়াসের বাইরে হতে পারে না। কারণ নিউট্রনের ভর প্রোটনের চেয়ে বেশি।)
বিটা বিকিরণের সময় নিউট্রিনো কিংবা অ্যান্টি নিউট্রিনো বের হলেও আমরা সেগুলোকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি হিসেবে বিবেচনা করিনি, কারণ এগুলো চার্জবিহীন এবং পদার্থের সাথে এদের বিক্রিয়া এত কম যে কয়েক আলোকবর্ষ দীর্ঘ সিসার পাত দিয়েও একটা নিউট্রিনোকে থামানো যায় না!
গামা রশ্মি আসলে শক্তিশালী বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ। কাজেই এর কোনো চার্জ নেই (আধানহীন), কিন্তু শক্তিশালী হওয়ার কারণে এর তরঙ্গ দৈর্ঘ্য খুব কম (কম্পন অনেক বেশি)। শক্তি বেশি বা কম হলেও এর বেগ সব সময়েই আলোর বেগের সমান। যখন কোনো নিউক্লিয়াস আলফা কণা কিংবা বিটা কণা বিকিরণ করে “উত্তেজিত" অবস্থায় থাকে তখন বাড়তি শক্তি গামা রশ্মি হিসেবে বের করে এটি নিরুত্তেজ হয়। গামা রশ্মি চাহীন এবং ভরহীন, তাই এর বিকিরণে নিউক্লিয়াসের পারমাণবিক সংখ্যা কিংবা নিউক্লিওন সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।
গামা রশ্মির যেহেতু চার্জ নেই তাই এটাকে বিদ্যুৎ কিংবা চৌম্বক ক্ষেত্র দিয়ে প্রভাবিত করা যায় না। চার্জ না থাকার কারণে এটি অণু-পরমাণুকে সরাসরি আয়নিত করতে না পারলেও অন্যান্য প্রক্রিয়ায় সেই ইলেকট্রন অণু-পরমাণুকে আয়নিত করতে পারে এবং সেখান থেকে গামা রশ্মির অস্তিত্বও বোঝা যায়। আলফা কিংবা বিটা কণার সমান শক্তিসম্পন্ন গামা রশ্মিকে থামাতে কয়েক সেন্টিমিটার সিসার পুরু পাতের দরকার হয়!
একটি নির্দিষ্ট তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস ঠিক কোন মুহূর্তে বিকিরণ করবে সেটি বলা সম্ভব নয়, পদার্থবিজ্ঞান শুধু তার বিকিরণ করার সম্ভাবনাটি বলতে পারে। সে কারণে তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ বের করার জন্য “অর্ধায়ু” (Half Life) এর ধারণাটি ব্যবহার করা হয়। যে পরিমাপ সময়ের ভেতর অর্ধেক সংখ্যক নিউক্লিয়াসের বিকিরণ ঘটে সেটি হচ্ছে অধার্থ। কাজেই যে নিউক্লিয়াসের তেজস্ক্রিতা যত বেশি তার অর্ধায়ু তত কম। স্থিতিশীল নিউক্লিয়াস, যার কোনো তেজস্ক্রিয়তা নেই তার অর্ধায়ুকে আমরা "অসীম" বলে বিবেচনা করতে পারি ।
এখানে একটি বিষয় জেনে রাখা দরকার, তেজস্ক্রিয়তা নিউক্লিয়াসের ঘটনা, তাই তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে একটি নিউক্লিয়াস অন্য নিউক্লিয়াসে পরিবর্তিত হয়। ভিন্ন নিউক্লিয়াস চাহীন পরমাণু হওয়ার জন্য খুব সহজেই এক দুইটি বাড়তি ইলেকট্রন তার কাছাকাছি পরিবেশ থেকে নিতে পারে কিংবা ছেড়ে দিতে পারে। তার কারণ নিউক্লিয়াসের ভেতরকার নিউক্লিয়ার শক্তি অনেক বেশি হলেও পরমাণুর ইলেকট্রনের শক্তি সে তুলনায় খুবই কম।
তেজস্ক্রিয়তার নানা ধরনের ব্যবহার আছে। খুব কম তেজস্ক্রিয়তার দ্রব্য শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে বাইরের থেকে তার গতিবিধি দেখে শরীরের অনেক তথ্য জানা যায়। সাধারণত সে রকম তেজস্ক্রিয় হয় খুব কম অর্থায়ু হয়তো কয়েক মিনিট, কাজেই ঘণ্টাখানেকের মাঝে ঐ পদার্থের সব তেজস্ক্রিয়তা শেষ হয়ে যায়।
তেজস্ক্রিয়তার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে প্রাচীন জীবাশ্মের বয়স নির্ণয় করাতে। আমাদের শরীরে প্রচুর কার্বন রয়েছে এবং তার ভেতরে নির্দিষ্ট পরিমাণ 14 আছে। যখন প্রাণী মারা যায় তখন তার শরীরে নতুন করে ঢুকতে পারে না। আগে যতটুকু ছিল সেটা তখন অর্ধায়ুর কারণে কমতে থাকে। কাজেই কতটুকু থাকা স্বাভাবিক এবং কতটুকু কমে গেছে সেটা থেকে সেই প্রাণী কত প্রাচীন তা নিখুঁতভাবে বের করা যায়।
তেজস্ক্রিয় কণা শরীরের কোষের ক্ষতি করতে পারে, সে জন্য নানা ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা হয়, আবার শরীরের ক্ষতিকর কোষ ধ্বংস করার জন্য এই তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করা যায়। সে কারণে ক্যান্সার চিকিৎসায় ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করার জন্য তেজস্ক্রিয় কণা ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া যন্ত্রপাতি জীবাণুযুক্ত করতে, আগুনে ধোঁয়ার উপস্থিতি নির্ণয়ে কিংবা খনিজ পদার্থে বিভিন্ন ধাতুর পরিমাণ নির্ণয়ে তেজস্ক্রিয়তার ব্যবহার রয়েছে।
উচ্চমাত্রার তেজস্ক্রিয়তা আমাদের শরীরে নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। যখন তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা শুরু হয় তখন বিজ্ঞানীরা সেটি ভালো করে জানতেন না বলে তারা নিজেরা তেজস্ক্রিয়তার সংস্পর্শে এসে রোগাক্রান্ত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন তেজস্ক্রিয় মৌল নিয়ে কাজ করার কারণে মেরি কুরি লিউকেমিয়াতে মারা যান। তেজস্ক্রিয়তা মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমিয়ে দেয়, এমনকি বংশ পরম্পরায় বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম দিতে পারে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা খুব বেশি তেজস্ক্রিয়তার মুখোমুখি হই না কিন্তু পৃথিবীর নতুন প্রযুক্তির কারণে এখন অনেকেই তেজস্ক্রিয়তার মুখোমুখি হতে শুরু করেছে। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া করানো হয়, সেখানে ভয়ংকর রকম তেজস্ক্রিয়তা তৈরি হয়। অনেকগুলো বর্জ্য পদার্থের অর্ধায়ু অনেক বেশি এবং লক্ষ বছর পর্যন্ত সেগুলো তেজস্ক্রিয় থাকে। নিউক্লিয়ার শক্তি কেন্দ্রের দুর্ঘটনায় বাইরে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়ার উদাহরণও আছে। নিউক্লিয়ার শক্তি দিয়ে চালানো জাহাজ, সাবমেরিন দুর্ঘটনাতেও অনেক মানুষ তেজস্ক্রিয়তার মুখোমুখি হয়েছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ঘটেছিল যখন হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে নিউক্লিয়ার বোমা ফেলা হয়েছিল, তখন অসংখ্য মানুষ তেজস্ক্রিয়তার মুখোমুখি হয়েছিল। কাজেই তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে নানা ধরনের গবেষণা শুরু হয়েছে এবং নিরাপদ তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা ইত্যাদি নির্ধারণ করা শুরু হয়েছে। একই সাথে কোথাও তেজস্ক্রিয় পদার্থ থাকলে সেটি সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করানো শুরু হয়েছে ।
Read more